আজ ৭ নভেম্বর। বিএনপি এ দিনটিকে সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস হিসেবে পালন করে। বিএনপি যখন ক্ষমতায় থাকে তখন এই দিনটিকে তারা সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালন করেন। কিন্তু বিএনপির যে দিবস পালনের নিঘন্টসূচি, তাতে ৭ নভেম্বর বিএনপির জন্য সবচেয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজ ৭ নভেম্বরও বিএনপির কিছু কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু সে কর্মসূচিগুলোর মধ্যে না ছিল আবেগ, না ছিল নেতাকর্মীদের সমাবেশ। এমনকি এ কর্মসূচিগুলোর মধ্যে এক ধরনের গাছাড়া ভাব লক্ষ্য করা গেছে। যেটি বিএনপি নেতাকর্মীদেরকেই হতাশ করেছে।
তবে বিএনপির ৭ নভেম্বর কর্মসূচি পালনের সব চেয়ে তাৎপর্য দিন ছিল, খালেদা জিয়ার নীরবতা এবং সব ক্ষেত্রে অনুপস্থিতি। বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত থাকলেও ৭ নভেম্বর নিয়ে একটা ন্যূনতম বিবৃতি দেননি। এই কর্মসূচিতে কোথাও তার কোনো উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। অবশ্য বিএনপির নেতারা বলছেন, তিনি অসুস্থ এবং এজন্য শারীরিকভাবে তার কোথাও উপস্থিতি সম্ভব নয়। কিন্তু শারীরিক অনুপস্থিতি সত্ত্বেও তিনি ৭ নভেম্বর উপলক্ষে তার নামে একটি বাণী প্রচারিত হলে অসুবিধা কোথায় ছিল? এ প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি নেতারা নীরব।






তবে ৭ নভেম্বরের বিএনপির এই ঘটনা জনগণের জন্য একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছে। সেটি হল বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে আগ্রহ নাই এবং তিনি কার্যত বিএনপির নেতা নন। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির মধ্যে এ ধরনের গুঞ্জন ছিল যে, খালেদা জিয়া হয়তো রাজনীতি থেকে বিদায় নেবেন। কিন্তু এ পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে, বিএনপির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়নি। ঘোষণা না দেয়া হলেও, বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যে নেই, সেটা গত ২৫ শে মার্চ থেকে মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গেছে।
এখন প্রশ্ন হল, বেগম খালেদা জিয়া কেন রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়েছেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে যে, মোটামুটি সুনির্দিষ্ট পাঁচটি কারণে বেগম খালেদা জিয়া আর রাজনীতিতে আগ্রহী নন। বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ করে এই পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করা গেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:






১। মামলার ভয়: খালেদা জিয়া মনে করছেন, তার বিরুদ্ধে যে মামলা চলমান রয়েছে এবং যে দুটি মামলায় তিনি দণ্ডিত হয়েছেন, এ মামলাগুলো আরো বেগবান হবে। তার আরো দীর্ঘদিন কারাগারে থাকতে হবে, যদি তিনি রাজনীতি করেন। এ কারণে তিনি সরকারের সাথে সমঝোতা করে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে একটি নিরাপদ গৃহজীবন বেছে নিয়েছেন।
২। বার্ধক্যজনিত কারণ এবং অসুস্থতা: বেগম খালেদা জিয়া বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছেন। এই অসুস্থতা নিয়ে তিনি এতই ব্যাতিব্যস্ত যে, রাজনীতি করার মতো উৎসাহ উদ্দীপনা বা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এ কারণেই এখন তিনি এক ধরনের অবসর জীবনযাপন করা এবং নিজের শরীরের যত্ন নেয়ার দিকে মনোযোগী।
৩। বিএনপি নেতাদের বিশ্বাসঘাতকতা এবং কাপুরুষতা: খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তারপর দীর্ঘ ২৫ মাস তিনি কারাভোগ করেন। এই সময় তিনি আশা করেছিলেন যে, বিএনপি নেতারা তার মুক্তির জন্য রাজপথে আন্দোলন করবে, অথবা আইনি লড়াই করবে। কিন্তু বাস্তবে বিএনপি নেতৃবৃন্দ কিছুই করতে পারেনি। আর এটি বেগম জিয়াকে ব্যথিত করেছে। এর ফলে যে দলের জন্য তিনি ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সে দলই যখন তার পাশে দাঁড়াতে পারে না তখন তিনি আশাহত হয়েছেন। এই আশাহত থেকেই তিনি বিএনপি নেতাদের বিশ্বাসঘাতকতা এবং কাপুরুষতায় রাজনীতির ওপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।






৪। তারেক জিয়া: বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উদাসীনতা এবং রাজনৈতিক অনাগ্রহের একটি বড় কারন হলো তারেক জিয়া। তারেক জিয়ার বিএনপিতে পুর্ণকতৃত্ব গ্রহণ করেছেন। সেখানে বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য কথা বা ইচ্ছা-অনিচ্ছা এখন মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। তাই বেগম খালেদা জিয়া জানেন যে, বিএনপিতে তিনি এখন গুরুত্বহীন। তারেক জিয়াই বিএনপিতে এখন শেষ কথা। এ কারণে তিনি রাজনীতির ব্যাপারে আগের মত আগ্রহী নন।
৫। আর্থিক কারণ: বেগম খালেদা জিয়া বিপুল বিত্ত এবং সম্পদের মালিক। তিনি মনে করছেন, রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে তার এই বিত্ত নিয়ে সমস্যা হতে পারে। আর এ কারণেই তিনি এখন চুপচাপ ঘরে বসে থেকে নিজের সম্পদকে নিরাপদ রাখা নীতি গ্রহণ করেছেন। আর এ সমস্ত কারণেই রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিক বিদায় না জানালেও, তিনি এখন রাজনীতিতে অনুপস্থিত। বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি অতীত বিষয়ে পরিণত হয়েছে।





