ফেসবুকে সেক্স ভিডিও ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর প্রতিক্রিয়া: সহিহ ইসলামিক ভাইটির নাম জয়নাল আবেদীন। বাড়ি থ্যাইংখালী ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়া। পেশায় সে একজন ঈমাম। ইকরা নুরানী মাদ্রাসার মুহতামিম। ত্রিশ পারা কোরান তার মুখস্থ। মানে সে একজন কোরানে হাফেজ।
থ্যাইংখালী ইউনিয়নের হেফাজতে ইসলামের সভাপতি সে। রাজাকার যুদ্ধাপরাধীর বিচারের সময় সে তার মাদ্রাসার সকল ছাত্রদের নিয়ে শাপলা চত্বরে জমায়েত হয়েছিলো ইসলামের হেফাজতের জন্য নাস্তিকদের কল্লা ফেলতে।
এলাকায় সে মসজিদ মাদ্রাসায় হাটে মাঠে চা’র দোকানে কোরান হাদিসের ব্যাখ্যা দিয়ে বলে, আওয়ামী লীগ নাস্তিকদের দল। কোন মুমিন মুসলমান আওয়ামী লীগ করতে পারে না। ৯০ পার্সেন্ট মুসলমানের দেশে ইসলামের বড় শত্রু আওয়ামী লীগ। কোন মুসলমান যদি আওয়ামী লীগ করার পর মারা যায়, তাহলে তার স্থান হবে জাহান্নামের হাবিয়া দোজখে।
আসুন এই সহিহ হেফাজতি ভাইয়ের ছবিগুলো ভাইরাল করে দেশবাসীকে ইসলামের হেফাজত করতে উদ্ভুদ্ধ করি। জাজাকাল্লাহ খায়রান।
আরেকজনের প্রতিক্রিয়া যেমন: হুজুর সাহেব গাড়ির ফিটনেস ঠিক আছে কি না চেকআপ চালাচ্ছে। চেকআপ শেষে তিনি জান্নাতের টিকিট দিবেন। কই আজকে সেই হুজুর সাহেবরা গেল কোথায়? বেশ তো সেদিন তাসলিমা নাসরিনকে দেশ থেকে বের করা হলো।
আবার কেউ ভেবে বসবেন না আমি তাসলিমা নাসরিনে পক্ষে বলছি, আমি শুধু বাস্তবতাটাই বলছি। হুজুরের শাস্তির জন্য আজকে আর হেফাজতের মতো কোনো সংগঠনকে রাস্তায় আন্দোলন করতে দেখা যাচ্ছে না কেন।
৫ মে ২০১৩ রাজধানীতে হেফাজতের তাণ্ডব
৫ মে, ২০১৩ সালের এই দিনে রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থান নিয়ে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির ওই বিভিষিকাময় ঘটনার চার বছর পূর্ণ হলো।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ৫ মে সকাল থেকেই গাবতলী বাস টার্মিনাল, টঙ্গী ও কাঁচপুর ব্রিজসহ রাজধানীর ছয়টি প্রবেশমুখেই অবরোধ করেছিল হেফাজত। অনেকের দাবি, হেফাজতের ব্যানারে সারাদেশ থেকে আসা কওমি মাদ্রাসার হাজারো ছাত্র-শিক্ষকের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা যোগ দিয়েছিল।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন হেফাজতের নেতারা। এই ঘোষণায় অবরোধকারীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
হেফাজতের নেতারা শাপলা চত্বরে সমাবেশের অনুমতি পেতে পুলিশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। দফায় দফায় তাঁদের অলোচনা হয়। বেলা ১১টায় অনুমতি মেলার আগেই কয়েকটি মিছিল ঢুকে পড়ে ঢাকায় এবং অরাজকতা দেখা যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও পল্টন এলাকায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তৎকালীন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বিবিসিকে জানান, অনেক আলোচনার পর শেষ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতকে শপলা চত্বরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল। তবে, শর্ত ছিল তারা শুধু মোনাজাত করেই কর্মসূচি শেষ করবে।
বেলা ১২ টায় সংঘর্ষ হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কাছে। সেখানে হেফাজতে ইসলামের মিছিলে আওয়ামী লীগের একদল নেতা কর্মী হামলা করেছিল বলে অভিযোগ হেফাজতের। তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফের বক্তব্য হচ্ছে, তাদের কার্যালয়ে হামলা হলে, কিছু নেতাকর্মী প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল।
দুপুর দেড়টার দিকে, ঢাকার প্রবেশপথগুলো থেকে হেফাজতের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীরা শাপলা চত্বরে পৌঁছায়। ওই সময় পল্টন মোড় থেকে বায়তুল মোকারম মসজিদের চারপাশের রাস্তায় বিভিন্ন ভবনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। একই সঙ্গে সংঘর্ষ ও সহিংসতাও চলতে থাকে। পুলিশও কয়েক দফা গুলি চালায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নিয়েছিল গোটা এলাকা। এ সময় মতিঝিল এলাকায় বিপুল সংখ্যক গাছ কেটে ফেলা হয়। দিনের এসব সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন হতাহতও হয়।
পুলিশের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী মোনাজাত শেষে চলে যাওয়ার কথা ছিল হেফাজতে। তবে এর নেতারা বক্তব্য দিতে দিতেই সন্ধ্যা পার করেন। পরে শাপলা চত্বরে অবস্থানের ঘোষণা আসে। হেফজতের যুগ্ম মহাসচিব জাফরউল্লাহ খানের দাবি, অবস্থানের বিষয়টা এসেছিল পরিস্থিতির কারণে।
হেফাজতকে সহযোগীতার জন্য ঢাকাবাসীকে আহ্বান জানিয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে এতে দৃশ্যত কোনো সাড়া মেলেনি। প্রসঙ্গত এর একদিন পরই বিএনপির সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল পল্টনে।
হেফাজতের কয়েকজন নেতার দাবি, ওই সময় যুদ্ধাপরাধের বিচারে সর্ব্বোচ্চ সাজার মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে শাহবাগে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তার পাল্টা হিসেবে হেফাজতের ১৩ দফার আন্দোলনকে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করেছিল কোনো কোনো মহল। তাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীও কৌশলে সক্রিয় ছিল।
৫ মে দিনভর হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীর মাতিঝিলে উপস্থিত হওয়া নিয়ে গুঞ্জন চলছিল। তবে দিনে তিনি সেখানে যাননি। পরে রাত সাড়ে দশটার দিকে পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে তাঁকে লালবাগ মাদ্রাসা থেকে শাপলা চত্বরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। কিছুটা পথ এসেই অসুস্থ এবং নিরাপত্তার অভাবের কারণ দেখিয়ে হেফাজতের আমির ফিরে যান। তিনি আর যাননি শাপলা চত্বরে।
পুলিশ অনুমতি দিয়েছিল শাপলা চত্বরে এসে শুধু মোনাজাত করেই কর্মসূচি শেষ করার শর্তে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এবং পল্টন এলাকায় সহিংসতা চলেছিল সন্ধ্যার পরও। এমন পরিপ্রেক্ষিতে হেফাজতকে মতিঝিল থেকে সরিয়ে দিতে রাতে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির হাজারো সদস্য রাজধানীর দৈনিক বাংলার মোড়, দিলখুশা, ফকিরাপুল এবং নটরডেম কলেজের সামনে অবস্থান নেয়। মতিঝিলে অবস্থানকারীদের সরে পড়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে কমলাপুর স্টেশন যাওয়ার রাস্তা এবং বঙ্গভবনের দিকের রাস্তা খোলা রাখা হয়েছিল। অপর তিন দিক থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আগানোর চেষ্টা করেন। প্রথমে হাত মাইক ব্যবহার করে অবস্থানকারীদের সরে যেতে বলা হয়। কিন্তু হেফাজতের মঞ্চ থেকেও আসতে থাকে উত্তেজনাকর বক্তব্য। ঘণ্টা দেড়েক এভাবেই চলে।
রাত পৌনে তিনটার দিকে শুরু হয় মূল অভিযান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তিন দিক থেকে ফাঁকাগুলি, আর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করতে থাকে। থেমে থেমে সাউন্ড গ্রেনেডও ব্যবহার করা হয়। গুলি এবং সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে অবস্থানকারীদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার হয়। ট্রাকের ওপর ভ্রাম্যমাণ মঞ্চও খালি হয়েছিল মুহূর্তেই।
হেফাজত নেতা জাফরউল্লাহ খান বিবিসিকে বলেন, অভিযানের সময় তারা যে যার মতো সরে পড়ায় নেতারা একজন আরেকজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। অভিযানের সময় হেফাজতের শত শত কর্মী সমর্থক মতিঝিল এলাকায় বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
ভোর চারটার দিকে তখনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থেমে থেমে ফাঁকা গুলি করে এবং আশেপাশের ভবনগুলোতে তল্লাশি চালায়। পুলিশ পুরো এলাকার দখল নেওয়ার পর বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নেওয়াদের বের করে এনে ওই এলাকা ছেড়ে যেতে সহায়তা করে। হেফাজতের শত শত কর্মী-সমর্থক মাথার উপর দুহাত তুলে লাইন ধরে পুলিশের কর্ডনের মধ্য দিয়ে ওই এলাকা ছেড়ে যাওয়ার ছবি পরবর্তীতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
রাতের অভিযানে নিহতের সংখ্যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক বিতর্ক দেখ দিয়েছিল পরবর্তীতে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৫ই এবং ৬ই মে দুদিন সারাদেশে ২৮ জনের নিহত হওয়ার কথা জানায়।
তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে মৃতের সংখ্যা হাজারের বেশি দাবি করা হলেও এর সপক্ষে কোনো তথ্য প্রমাণ মেলেনি।